আধুনিক নৈরাজ্যবাদ হচ্ছে উদারনীতিবাদ ও সমাজতন্ত্রের মহামিলন। ঐতিহাসিকভাবে ফরাসি বিপ্লবের গর্ভেই সামাজিক-অর্থনৈতিক একচেটিয়া ও শ্রেণী-ক্ষমতার উচ্ছেদের প্রশ্ন হিসেবে আসে সমাজতন্ত্রের ধারণা। কোন গৎবাঁধা বা মহান দার্শনিক প্রণীত তত্ত্ব নয়, একেবারে ‘স্বাধীনতা-সাম্য-মৈত্রী’র পুর্ণাঙ্গ ও ফলপ্রসু চর্চার এক দৃষ্টিকল্প হিসেবে এর আবির্ভাব। যুগে যুগে নৈরাজ্য-পথিকগণ কাঙ্ক্ষিত সমাজের জন্য লড়াই করেছেন, নির্মাণ করেছেন মুক্ত সমাজের পথ।
জার্মান নৈরাজ্যবাদী রুডলফ রকার ছিলেন অ্যানার্কো-সিন্ডিক্যালিস্ট। ১৯৩৮ সালে লন্ডন থেকে প্রকাশিত তাঁর Anarcho-syndicalism: Theory and Practice বইয়ের প্রথম অধ্যায় Anarchysm: Its Aim And Purposes– এর বাংলা অনুবাদ এই রচনাটি। রকার মুক্তির প্রশ্নে নৈরাজ্য-পথিক ও চিন্তকদের দৃষ্টিকল্পর সারমর্ম করেছেন এই রচনায়। দেখিয়েছেন, নৈরাজ্যবাদী চিন্তকদের সাধারণ অবস্থান হল, সকল জবরদস্তিমূলক সামাজিক-অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক ক্ষমতার উচ্ছেদ এবং সরাসরি গণ-অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে স্ব-শাসন বা আত্মকর্তৃত্ব গড়ে তোলা। ২০০৭ সালে সেনা-কর্তৃত্বের জরুরি শাসনের সময় মুক্তিমুখিন প্রতিরোধের একজন চিন্তক ও সক্রিয়ক হিসেবেই গুরুত্বপূর্ণ এই অনুবাদ কর্মটি সম্পন্ন করেন সেলিম রেজা নিউটন। আগস্টের শিক্ষার্থী বিক্ষোভের আগে আগে, মে মাসে। রাষ্ট্র, বলপ্রয়োগ এবং শ্রেণী-ক্ষমতা উচ্ছেদের প্রশ্নে নবতর পথ উন্মোচন করে রচনাটি। অনুবাদ কর্মটি পত্রিকায় প্রকাশের আগেই অনেকের কাছে বিলি করা হয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আগস্ট বিক্ষোভ এবং পরবর্তী সময়ে গড়ে ওঠা কর্তৃত্ব বিরোধী আন্দোলনের কর্মী-সংগঠকদের মাঝে এর প্রভাব ছিল বিপুল। অনুবাদটি প্রথম ছাপা হয় ২০১১ সালে, খুলনা থেকে প্রকাশিত বাউন্ডুলে পত্রিকায়।
রকারের এই রচনার পটভূমি ছিল স্পেনের গৃহযুদ্ধ। একদিকে জেনারেল ফ্র্যাঙ্কোর ফ্যাসিবাদ, অন্যদিকে বলশেভিক কর্তৃত্বতন্ত্র। দুইয়ের বিরুদ্ধে লড়াই করেই স্পেনে ১৯৩৬ সালের জুলাই মাসে নবতর রাষ্ট্রবিহীন সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে সেখানকার শ্রমজীবীদের সংঘ- সিএনটি। প্রচ্ছদে জুলাই বিপ্লবের স্মারক হিসেবে এনার্কিস্ট চিত্রকর জোসেপ বারদাসানোর মাদ্রিদ ফ্রন্ট পপুলার নামক চিত্রকর্মটি ব্যবহার করা হয়েছে। ১৯৩৬ সালে এটি সিএনটির একটি পোস্টার হিসেবে প্রকাশিত হয়।